গোয়াইনঘাটের সোনারহাটে চোরাচালানিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। টনে টনে মশলা,চিনি,গরু সহ ইত্যাদি প্রবেশ করছে সোনারহাট সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে। এতে বিপাকে পড়েছে বৈধ আমদানিকারকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আমদানিতে শুল্কহার চড়া। এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ এবং গোলমরিচে মোট শুল্কহার প্রায় ৬৪.৫০ শতাংশ। যত্রিকে ৬৬ শতাংশ মোট শুল্কহার। সব ধরণের মশলায় উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক বিদ্যমান হওয়ায় চোরাপথে প্রবেশ করে। ভারতে মশলার বিভিন্ন আইটেম উৎপাদিত হয়। তারপরও আমদানিতে শুল্কহার খুব কম। সেখানে মোট শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ। আমাদের দেশের সাথে প্রতিবেশি দেশ দু’টির শুল্কহারে এ আকাশ-পাতাল ব্যবধানের কারণে মশলা চোরাচালান হয়ে আসছে।সিলেটের ব্যবসায়ীরা আরও জানালেন, সব সময় চোরাচালানে মশলা আসে। কখনও কম, কখনও কিছুটা বেশি। তবে, সাম্প্রতিককালে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মশলার চোরা ব্যবসায়ীরা। গোয়াইনঘাটের সোনারহাটে ভিত্তিক দু’টি চক্র মশলার চোরাকারবারে জড়িত। লাখাট এবং লক্ষনছড়া সীমান্ত দিয়ে ওপার থেকে পাচার হয়ে আসছে বস্তায় বস্তায় মশলা। এরপর নৌকাভর্তি হয়ে একেবারে হাদরপার,গোয়াইনঘাট পর্যন্ত পৌঁছে যায়। মধ্য রাত থেকে ভোরের মধ্যে চোরাচালানের নৌকা পৌঁছে। সীমান্ত পার হওয়ার পর থেকে এখানে পর্যন্ত পৌঁছতে স্থানে স্থানে যেসব আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারি সংস্থার প্রতিরোধে পড়ার কথা তারা উদাসীন অথবা তাদের যোগসাজশ রয়েছে, নতুবা এতদূর পর্যন্ত চোরাই মশলা এসে পৌঁছতে পারতো না বলে মনে করেন তথ্যাভিজ্ঞমহল।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের মশলা আমদানিকারকদের কয়েকজন জানালেন যে চোরাপথে পণ্য আসার ফলে তারা বেশ সমস্যায়। অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন তারা। বৈধপথে আমদানি করা মশলা বিক্রি হচ্ছে না। তারা বিপুল লোকসানের সম্মুখীন। মশলার চোরাপথের ব্যবসা না হলে অনেক আমদানিকারক ব্যাংক ঋণ শোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে পড়বেন।
মশলার উপর উচ্চ শুল্কহার বিদ্যমান বেশ কয়েক বছর ধরে। আমদানি পর্যায়ে মশলার সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট প্রত্যাহার এবং অন্যান্য শুল্ক হার যৌক্তিকভাবে হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ পাইকারি গরম মশলা ব্যবসায়ী সমিতি, চিটাগাং চেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে বিগত কয়েক বছর ধরে সুপারিশ করে আসছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যানের সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই সুপারিশ করা হয় প্রতি বছর। বাজেটে সেটা গুরুত্ব পায় না। এতে চোরাপথে মশলা আসে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে ।
আমাদের মশলার চাহিদা পূরণ হয় আমদানি করে। রান্নাবান্না ছাড়াও আয়ুর্বেদ ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার হয় নানা প্রকারের মশলা। কমপক্ষে এক পঞ্চমাংশ চাহিদা আয়ুর্বেদ ঔষধ শিল্পের। চীন, গুয়াতেমালা, সিরিয়া, ইরান, তুরস্ক, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। প্রধানত সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার ব্যবসায়ীরা এলাচি, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জয়ত্রী, জায়ফল ইত্যাদি মশলা আমদানি করেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানালেন, প্রতিবছর রমজানে গরম মশলার চাহিদা বেড়ে যায়। এরপর থেকে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত চাহিদা এবং দাম দুটোই বৃদ্ধি পেতে থাকে।